ডিজিটাল অবকাঠামো
বাড়ী তৈরি হয় ইট, ইস্পাত, তার আর ফিউজ দিয়ে। ইন্টারনেটেরও কাঠামো আছে। স্থূল ও সূক্ষ্ম অবকাঠামো দিয়ে তা গড়া – সার্ভার, ফাইবার অপটিক কেবল, কোড আর অন্যান্য জিনিসে। ইন্টারনেটের অন্তর্লীন কাঠামো অনেকভাবেই ঠিক করে দেয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কিভাবে একে রসদ বা স্থান হিসাবে ব্যবহার করবে। কিন্তু জরুরী কথা এই যে, এই সব কাঠামো বেশির ভাগ সময়েই অদৃশ্য। আমরা সবসময় জানি না কোনো ওয়েবসাইটের আধার যে সার্ভার, তার ঠিকানা কি, আর পর্দার পেছনে চলমান কোন কোড ঠিক করে দিচ্ছে আমাদের সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল, তা তো আমরা একেবারেই জানি না। আমাদের গড়ে তোলা বাড়ীর মত আমাদের ইন্টারনেটও বিভিন্ন মানুষিক সিদ্ধান্তের ফলাফল। তা কিরকম হওয়া উচিত, তা কিছু মানুষের সিদ্ধান্ত থেকেই নির্নিত হচ্ছে। অতএব সেই সিদ্ধান্ত কোন মানুষরা নিচ্ছে, তা জানা আমাদের জন্য জরুরী বৈকি!
যেহেতু ইন্টারনেটের অবকাঠামো আমাদের কাছে অদৃশ্য, অতএব তাতে যেসব বৈষম্য বোনা আছে সেসবও অদৃশ্য। কিন্তু বৈষম্য বিলক্ষণ আছে। বেশীর ভাগ সার্ভার (যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর ব্যবহারকারীদের ডাটার আধার) ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা বা ইউরোপে অবস্থিত, যদিও সারা বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তিন-চতুর্থাংশ ভূগোলকীয় দক্ষিণে অবস্থিত। পৃথিবীর কিছু কিছু অঞ্চল বা দেশ বেশী ‘যোগাযোগসম্পন্ন’ অন্যদের তুলনায়, কারণ দীর্ঘ, জটিল ঐতিহাসিক কারণে কোথাও সুবিধা বেশি পাইয়া গেছে, কোথাও কম – যোগাযোগ সমৃদ্ধির ভূগোলও সেভাবে বদলে গেছে। অধিকাংশ কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট আর ইঞ্জিনিয়ার (এখনো) পুরুষ, আর ইন্টারনেটের সবচেয়ে বুনিয়াদি প্রয়োগের জন্য লেখা এলগরিদমের মধ্যে জাতিবাদী আর পুরুষবাদী লক্ষণ সুস্পষ্ট। আমরা যেহেতু ক্রমশঃ সচেতন এলগরিদম (তথাকথিত “আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স”) গড়া শুরু করে দিয়েছি – সেই এলগরিদমে “ভাবা” আর “শেখা”-র মাধ্যমে চেতনাসঞ্চারের পাঠ কিভাবে ও কাদের দ্বারা পড়ানো হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে।
যে সব প্রশ্ন আমাদের খুব কাছের:
- ইন্টারনেটের ভূগোল দেখতে কেমন?
- আমরা যে ইন্টারনেট রোজ দেখি আর ব্যবহার করি, তা গড়ছে কে?
- ইন্টারনেটের অদৃশ্য অবকাঠামোর মধ্যে কি কি বৈষম্য বোনা আছে?
- কোড কখনই নিরপেক্ষ হতে পারে না (কারণ কোড মানুষে লেখে!), কিন্তু তাকে আমরা মানবিকতাপূর্ণ কিভাবে করতে পারি?
- কিভাবে আমরা এক আরও বিকেন্দ্রীভূত আর আরও স্বায়ত্তশাসিত ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করতে পারি?
Translation: Sourav Roy