চীনের তেল ও গ্যাসের উৎপাদন স্থিতিশীল আছে; বাড়ছে সামুদ্রিক শক্তির উত্পাদন
চীনের তেল ও গ্যাসের উৎপাদন স্থিতিশীল আছে; বাড়ছে সামুদ্রিক শক্তির উত্পাদন
2022-12-22 16:39:48

ডিসেম্বর ২২: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চীনের সামুদ্রিক শক্তি উন্নয়ন ফোরামে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, সামুদ্রিক শক্তি সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। অফশোর তেল ও গ্যাস উৎপাদন দেশের জ্বালানিকাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।

সিএনওওসি এনার্জি ইকোনমিক্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ওয়াং জেন ফোরামে বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী শক্তি সরবরাহের ধরণ এবং শক্তিবাজারের কাঠামোকে গভীরভাবে পরিবর্তন করেছে এবং বিভিন্ন দেশ জ্বালানি সুরক্ষার উপর গুরুত্ব বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানি সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, কিছু দেশ ও অঞ্চল পুনরায় বিদ্যুত উত্পাদনের জন্য কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে, কয়লা-চালিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে, এবং বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন শক্তি রূপান্তরের গতি তাই পর্যায়ক্রমে শ্লথ হয়ে গেছে।

 

সভায় প্রকাশিত ‘চায়না ওশান এনার্জি ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট, ২০২২’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লা ও তেলের ব্যবহার ০.৩ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুপাত ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস পাবে। মূলত, বিশ্বে শক্তি উত্পাদনের সাথে সম্পর্কিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৩৪.৯ বিলিয়ন টন হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২২ সালে চীনের শক্তিব্যয় কাঠামোতে কয়লার অনুপাত সামান্য বৃদ্ধি পাবে, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুপাত সামান্য হ্রাস পাবে, এবং অ-জীবাশ্ম শক্তির অনুপাত ২০২১ সালের ১৬.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭.২ শতাংশ হবে।

 

চলতি বছর যদিও মহামারী ও দামের কারনে অভ্যন্তরীণ শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে এবং অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, অভ্যন্তরীণ তেল ও গ্যাস উত্পাদন বজায় ছিল। ভবিষ্যতে বিদেশী অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর চীনের নির্ভরতা হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, অভ্যন্তরীণ অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ২০২২ সালে প্রায় ২০৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে, যা ২০১৬ সালের পর প্রথমবার ২০০ মিলিয়ন টন ছাড়িয়েছে। অনুমান করা হয়েছে যে, চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্পাদন পুরো বছরের জন্য ২২১.১ বিলিয়ন ঘনমিটার হবে।

 

‘সামুদ্রিক শক্তির বিকাশ শক্তি সুরক্ষা এবং রূপান্তর সমন্বয়ের জন্য একটি মূল শক্তি হয়ে উঠবে’। জাতীয় শক্তি প্রশাসনের উপ-পরিচালক রেনজিংডং বলেছেন যে, গত দশ বছরে, বিশ্বের বড় তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের আবিষ্কারগুলির মধ্যে, অফশোর তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের সংখ্যা এবং পুনরুদ্ধারযোগ্য মজুদ ৮০ শতাংশেরএর বেশি। বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক প্রাকৃতিক গ্যাসসম্পদ প্রচলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪২ গুণ।

 

তিনি বলেন, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে, অফশোর তেল ও গ্যাসসম্পদ, বিশেষ করে গভীর পানির তেল ও গ্যাস সম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পরিণত হবে, যা কার্যকরভাবে চীনের তেল ও গ্যাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। একই সময়ে, শক্তিকাঠামোর সমন্বয়কে ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়ায়, সামুদ্রিক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি চীনের সম্পদের উপর ভিত্তি করে সক্রিয়ভাবে এবং অবিচলিতভাবে কার্বননিরপেক্ষতা প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হয়ে উঠবে।

ওয়াংজেন বলেন, চলতি বছর তেল ও গ্যাসের দামের তীব্র বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অফশোর তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই বছর অফশোর তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ১৬৭.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা মোট তেল ও গ্যাস বিনিয়োগের ৩৩.২ শতাংশ। গভীর জল এবং অতি-গভীর জলের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য হল সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগের অঞ্চল এবং চীনের কর্মক্ষমতা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক৷ ২০২২ সালে, বৈশ্বিক অফশোর ড্রিলিংকাজের চাপের প্রায় ৪০ শতাংশ চীনের জলসীমা থেকে আসবে।

 

চলতি বছর চীনের সমুদ্র উপকূলীয় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়নকাজে বড় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীন অফশোর তেল ও গ্যাস খাতে ৭টি নতুন ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছে, সফলভাবে ২০টি তেল ও গ্যাস কাঠামোর মূল্যায়ন করেছে এবং বছরের মধ্যে ৭টি নতুন উৎপাদনক্ষমতার প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা করেছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চীনের অফশোর তেল উৎপাদন ২০২২ সালে ৫৮.৬২ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে, বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৬.৯ শতাংশ। চীনে চলতি বছর অফশোর প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ২১.৬ বিলিয়ন ঘনমিটারে পৌঁছেছে, বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৮.৬ শতাংশ। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)